Loading...

Pages

Monday, November 19, 2012

শাস্ত্রীয় সংগীতের অগ্রযাত্রাকে অভিনন্দন


প্রথম আলো কার্যালয়ে গতকাল আয়োজিত ‘বাংলাদেশে শাস্ত্রীয় সংগীত’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে অতিথিরা প্রথম আলো কার্যালয়ে গতকাল আয়োজিত ‘বাংলাদেশে শাস্ত্রীয় সংগীত’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে অতিথিরা
ছবি: প্রথম আলো

‘বেঙ্গল-আইটিসি এসআরএ ক্লাসিক্যাল মিউজিক ফেস্টিভ্যাল’-এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে শাস্ত্রীয় সংগীত উৎসবের যাত্রা শুরু হচ্ছে। সংগীতের এই যাত্রাকে থামানো যাবে না। সুন্দর আগামীর প্রত্যাশায় এই উৎসবকে অব্যাহত রাখতে হবে। তবেই এ উৎসব বাংলাদেশে শাস্ত্রীয় সংগীতের বিকাশে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারবে।
প্রথম আলো ও বেঙ্গল ফাউন্ডেশন আয়োজিত ‘বাংলাদেশে শাস্ত্রীয় সংগীত’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় সংগীত বিশেষজ্ঞরা এসব কথা বলেছেন। প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফের সঞ্চালনায় প্রতিষ্ঠানের সেমিনারকক্ষে এই আলোচনা হয়। ভবিষ্যতে অধিক হারে বাংলাদেশি শিল্পীদের উৎসবে সুযোগ দেওয়ার জন্য বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের কাছে অনুরোধ জানান আলোচকেরা।
২৯ নভেম্বর থেকে ২ ডিসেম্বর পর্যন্ত অনুষ্ঠেয় ‘বেঙ্গল-আইটিসি এসআরএ ক্লাসিক্যাল মিউজিক ফেস্টিভাল’কে সামনে রেখে এই আলোচনার আয়োজন করা হয়।
এতে বিশিষ্ট উচ্চাঙ্গসংগীতের শিল্পী আজাদ রহমান বলেন, সব ধরনের সংগীতের উৎকর্ষ সাধনে শাস্ত্রীয় সংগীত শেখা বা জানার বিকল্প নেই। সেই জানানো ও শেখানোর কাজটি বেঙ্গল ফাউন্ডেশন শুরু করেছে। তার ওপর উৎসবটি উৎসর্গ করা হয়েছে বাবা ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ সাহেবকে। সুতরাং এই আয়োজনে সবার সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া উচিত।
আজাদ রহমান আরও বলেন, বাংলাদেশ এই উৎসবের স্বাগতিক দেশ। তাই বাংলা ভাষার প্রতি সম্মান দেখিয়ে উৎসবের শুরুটা বাংলা খেয়াল গানের মাধ্যমে শুরু হলে ভালো হয়।
সংগীত গবেষক মোবারক হোসেন খান বলেন, ‘বেঙ্গল ফাউন্ডেশন শাস্ত্রীয় সংগীত উৎসবের যে যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছে, তার শেষ করা যাবে না। কলকাতার ডোভারলেন কনফারেন্সের মতো এখানে বছরে অন্তত একটি উৎসব হলে আমাদের শিল্পী ও শ্রোতারা নিজেদের সমৃদ্ধ করতে পারবেন। আমাদের শিল্পীদের সামনে শাস্ত্রীয় সংগীতের নতুন দিক উন্মোচিত হবে।’
সংগীতশিল্পী ফেরদৌসী রহমান বলেন, ‘দেশভাগের পর এ দেশে উচ্চাঙ্গসংগীতের অবস্থা ভালো ছিল না। জোর করে ভালো লাগানোর জন্য আমরা অন্তত ১০ মিনিট গাইবার চেষ্টা করতাম। আসলে সে সময় আমরা শ্রোতাদের উপযোগী করে গাইনি। এ বিষয়ে রেডিও-টেলিভিশনও ভালো ভূমিকা রাখেনি। রেডিও-টেলিভিশনে যে সময় উচ্চাঙ্গসংগীত প্রচাারিত হতো, সে সময় কঠিন উচ্চাঙ্গসংগীতপ্রেমীর পক্ষেও তা শোনা সম্ভব নয়, যে কারণে এখানে শ্রোতা তৈরি হয়নি।’ তিনি আরও বলেন, ‘শাস্ত্রীয় সংগীত শুনতে শুনতে একসময় শ্রোতাদের কান তৈরি হয়। সে জন্য সময়ের প্রয়োজন। কিন্তু তার আগে শ্রোতাদের উঁচুমানের শাস্ত্রীয় সংগীত শোনানোর যাত্রা শুরু করতে হবে। সেই শুরুটা হচ্ছে। সুতরাং একসময় শ্রোতা তৈরি হবে, শিল্পীও তৈরি হবে।’
বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের বলেন, পঞ্চকবি বা লালনের গানে বাংলাদেশ অনেক সমৃদ্ধ। কিন্তু পিছিয়ে আছে শাস্ত্রীয় সংগীতে। এই শাখার উৎকর্ষ সাধনে বেঙ্গল ফাউন্ডেশন প্রতি দুই মাসে একটি করে উচ্চাঙ্গসংগীতের অনুষ্ঠান করে যাচ্ছে। এ ছাড়া প্রতিবছর একটি বড় ধরনের উৎসব করার পরিকল্পনা আছে। তিনি জানান, সংগীত রিসার্চ একাডেমির (এসআরএ) সঙ্গে বেঙ্গল ফাউন্ডেশন নতুন চুক্তি করেছে। চুক্তি অনুযায়ী তারা পাঁচ বছরের জন্য শিক্ষক দেবেন। এ সময়ের মধ্যে স্থানীয় শিক্ষার্থীদের তালিম দিয়ে তাঁরা দেশে ফিরে যাবেন।
বাংলাদেশে শাস্ত্রীয় সংগীতের শ্রোতা আছে, তা বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের উৎসবে প্রমাণিত হবে বলে মনে করেন নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার। তিনি বলেন, শাস্ত্রীয় সংগীতের প্রসারে বিটিভিকে দায়িত্ব নিতে হবে। বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলোর সঙ্গেও আলোচনা করা যেতে পারে।
উৎসবের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক লুভা নাহিদ চৌধুরী জানান, সাধারণ মানুষের দেখার সুবিধার্থে উৎসবে কোনো প্রবেশমূল্য ধরা হয়নি। তবে সবাইকে অবশ্য নাম নিবন্ধন করতে হবে। এরই মধ্যে প্রায় ১৫ হাজার মানুষ নাম নিবন্ধন করেছেন। অনেক রাত পর্যন্ত উৎসব চলবে। তাই শ্রোতাদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য আয়োজকদের পক্ষ থেকে বাসের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
এবারের উৎসবে বড় মাপের শাস্ত্রীয় সংগীতশিল্পীদের আগমন স্থানীয় শিল্পী ও শ্রোতাদের প্রেরণা জোগাবে বলে আশা প্রকাশ করেন রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী ইফফাত আরা দেওয়ান।
শিল্পী শামা রহমান বলেন, শাস্ত্রীয় সংগীতের যে যাত্রা শুরু হয়েছে, আশা করি তা অব্যাহত থাকবে।
শিল্পী অসিত কুমার দে বলেন, শাস্ত্রীয় সংগীত বিশেষ শ্রেণীর মানুষের সংগীত। এই শ্রেণীর সংখ্যা বাড়ানোর জন্য টেলিভিশনে শাস্ত্রীয় সংগীতের প্রচার বাধ্যতামূলক করা যেতে পারে।
উৎসবকে অর্থবহ করতে ও স্থায়িত্ব দিতে হলে ভবিষ্যতে এ দেশের শিল্পীদের সুযোগ দিতে হবে বলে মনে করেন উচ্চাঙ্গসংগীত শিল্পী অনুপ বড়ুয়া।
শিল্পী রেজোয়ান আলী বলেন, বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠানগুলোতে সপ্তাহে দুই দিন দুই ঘণ্টা করে উচ্চাঙ্গসংগীত শেখানো হয়। এতে করে আর যাই হোক, শিল্পী তৈরি করা সম্ভব নয়।
নজরুল সংগীতশিল্পী খায়রুল আনাম শাকিল বলেন, বেঙ্গলের স্কুলে ভারতীয় শিক্ষকদের পাশাপাশি স্থানীয় শিক্ষকদের সুযোগ দেওয়া হলে স্থানীয় শিল্পী ও শিক্ষার্থীরা অনুপ্রেরণা পাবে।
সেতার শিল্পী রিনাত ফওজিয়া বলেন, অল ইন্ডিয়া রেডিও প্রতিদিন ছয় ঘণ্টার শাস্ত্রীয় সংগীতের অনুষ্ঠান প্রচার করে ভারতীয় শ্রোতাদের রুচি তেরি করেছে।
শিল্পী বাপ্পা মজুমদার সংগীতের বিকাশে স্কুলের পাঠ্যসূচিতে উচ্চাঙ্গসংগীত অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলেন।
শিল্পী ও শ্রোতার মননশীলতার জন্য শাস্ত্রীয় সংগীত শোনা জরুরি বলে মনে করে শিল্পী অদিতি মহসীন।
উচ্চাঙ্গসংগীত শিল্পী প্রিয়াঙ্কা গোপ বলেন, ‘বেঙ্গলের উৎসবের মধ্য দিয়ে আমাদের হতাশা কাটতে শুরু করবে। ভবিষ্যতে আরও সুন্দর দিন আসবে।’
 সূত্র: প্রথমআলো.কম, ১৯/১১/২০১২

0 comments:

Post a Comment

 
Design by Free WordPress Themes | Bloggerized by Lasantha - Premium Blogger Themes | cheap international calls